নিউজ ডেস্ক॥ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরাইল নির্মম বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে গত ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে। এ সময়ে ইসরাইলি বাহিনী প্রতিদিন অঞ্চলটিতে ঘণ্টায় গড়ে প্রায় একজন করে ফিলিস্তিনি নারীকে হত্যা করেছে এবং এখনো করছে। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থা ইউরোপ-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউরোপ-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজা ভূখণ্ডে সরাসরি বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরাইলি দখলদার সেনাবাহিনী প্রতিদিন গড়ে ২১ দশমিক ৩ জন নারীকে হত্যা করেছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এর মানে—প্রতি ঘণ্টায় প্রায় একজন ফিলিস্তিনি নারী নিহত হয়েছেন। এই হিসাবের মধ্যে অবরোধ, অনাহার বা চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সংস্থাটি বলেছে, গাজায় নারী হত্যার এ হার ‘বিস্ফোরক’ ও ‘নজিরবিহীন।’ এই হার গাজাবাসীকে নির্মূলে ‘সুসংবদ্ধ ইসরাইলি নীতির’ প্রতিফলন, যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনি নারীদের, বিশেষ করে মায়েদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
ইউরোপ-মেডের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা হাজার হাজার নারীর হত্যাকাণ্ডের নথি সংগ্রহ করেছেন। তাদের অনেকে সন্তান ধারণে সক্ষম বয়সের এবং হাজার হাজার মা তাদের সন্তানদের সঙ্গেই নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি, আশ্রয়শিবির, অস্থায়ী আশ্রয়স্থল বা সুরক্ষার খোঁজে পালানোর সময় অথবা সন্তানদের রক্ষা করতে গিয়ে তারা নিহত হয়েছেন।
সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, প্রতিদিন লক্ষ্যবস্তু করার এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল গাজায় ফিলিস্তিনি নারীদের হত্যাকে একটি ‘জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গণহত্যার অপরাধের আওতায় পড়ে। এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে।
গাজা প্রশাসনের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নথি অনুসারে, গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার ৫৮২ দিনে ১২ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯২০ জন ছিলেন মা। মাঠপর্যায়ের তথ্যে দেখা গেছে, সরাসরি ইসরাইলি বোমাবর্ষণের কারণে মা, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের মৃত্যুর হার নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংস্থাটি বলেছে, ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তু শুধু হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী অপুষ্টি, ক্ষুধা ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন। সংস্থাটি ব্যাখ্যা করেছে, মার্চের শুরু থেকে ইসরাইলের কঠোর অবরোধ এবং পণ্য ও ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এসটি/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :