
ভোলা প্রতিনিধি॥ভোলায় বিএনপি ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটার আঘাতে এ সময় এসময় এক পুলিশ, দুই সাংবাদিকসহ উভয় দলের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গুরুতর আহতদের ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করেছে উভয় দল। শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে জেলা শহরের নতুন বাজার এলাকায় জেলা বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সুত্র ও সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলায় শনিবার বিএনপি ও বিজেপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা পৌনে ১২টার দিকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে জেলা জাতীয় পার্টির নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বাংলাস্কুল মোড়, সদর রোড হয়ে বরিশাল দালানের সামনে দিয়ে চকবাজার হয়ে পুনরায় নতুন বাজারে এসে শেষ হয়। এরপর তারা কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করে।
অন্যদিকে, সকাল থেকে শহরের মহাজনপট্টিতে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েক হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী একটি মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি বাংলাস্কুল মোড় ঘুরে কাবিল মসজিদ মোড় হয়ে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন। যা প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চলে। এ সময় বোমা সদৃশ বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এসময় ভোলা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আউয়াল, স্থানীয় দৈনিক আজকের ভোলার সহ-সম্পাদক ও বাংলাবাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম শাহরিয়ার ঝিলন, নিউজ ২৪ এর ক্যামেরা পার্সন রানা ইসলামসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এরমধ্যে গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে কোন নেতা-কর্মীর নাম বলতে রাজি হননি কোন দলের নেতারা।
এ ঘটনায় জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দাবিতে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। আজকে আমাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণ শেষে র্যালি নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলো, হঠাৎ বিএনপির একটি গ্রুপ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। যা আমাদের দীর্ঘদিনের ঐক্য নষ্ট করার অপচেষ্টা। তাদের হামলায় আমাদের বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। বিনা উসকানিতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন।
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাছিম বিল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, আন্দালিব রহমান পার্থ’র গরুর গাড়ি মার্কার সমর্থনে আমাদের শান্তিপূর্ণ র্যালি ও সমাবেশ শেষ করে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিল। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় এবং অফিস ভাঙচুরসহ আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে আহত করে।
অন্যদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের হ্যাঁ/না ভোটের দাবিসহ নির্বাচনে বিলম্ব ঘটানোর প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলাম। বিজেপির মিছিল শেষে আমাদের মিছিল শুরু হয়। আমাদের মিছিলটি নতুন বাজার এলাকায় বিজেপির মুখোমুখি হলে আমরা নেতা-কর্মীদের পিছু হটতে বলি। পরে কে বা কারা ঢিল ছোড়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে, এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আমরা চাই রাজনীতি শান্তিপূর্ণ ধারায় চলুক। এ ঘটনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিএনপি ও বিজেপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কারণে পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের নতুন বাজারস্থ জেলা বিজেপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। বিকেল ৫টার দিকে ভোলার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এখনো পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসটি/এম
আপনার মতামত লিখুন :