জরুরী নাম্বার সমূহ :

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড


Songbad Times প্রকাশের সময় : জুলাই ১৫, ২০২৫, ৩:০২ পূর্বাহ্ন /
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড

মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ ঘটনার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও দাবি দলটির। সোহাগ হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠন করেছে বিএনপি।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মহাসচিব বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অসংখ্য মানুষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছাকাছি অবস্থান থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রতিরোধ না হওয়ায় ঘটনা সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। দৃঢ় দলীয় অবস্থান থাকা সত্ত্বেও একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে আমাদের দল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের শালীনতা ও চরিত্রহননের দুঃসাহস প্রদর্শন করছে।

সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ একটি দল এবং তার প্রধান নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরে যাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ১১ জুলাই জুমার নামাজের পর ‘প্রাইম টাইমে’ ইন্টারনেটে ছড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে তৈরি করে রাখা ফটোকার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইন শুরুর আগে থেকেই অপপ্রচারসামগ্রী তৈরি করে রাখা হয়েছিল।

অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দায়িত্বশীল সব রাজনৈতিক দল সচেতন হবে বলে তারা আশা করেন।

তিনি বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত তিনটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, চাঁদপুরে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব মোল্লাকে হত্যা ও রগ কাটা-এমন হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সবার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমমানের ছিল কি না, সে প্রশ্নও তোলেন বিএনপি মহাসচিব।

মহাসচিব বলেন, মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করার বিষয়ে আমাদের দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় ও অপরিবর্তিত। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত করতে এবং ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ সৃষ্টি করতে চান, তাদের চিহ্নিত ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ও উচ্চারণ করতে চাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত লাল চাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডে একটি বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা বা উপস্থিতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার এজাহারের অসংগতি প্রসঙ্গে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, তাদের উল্লি­খিত তিনজন অপরাধীর নামের স্থলে এমন তিনজনের নাম সংযুক্ত করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি, নৃশংসতার মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের এ পর্যন্ত গ্রেফতার দূরে থাক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখনো তাদের নাম-পরিচয় উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এছাড়াও আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে অসংখ্য মানুষের সামনে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকটবর্তী অবস্থান থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনার কোনো প্রতিরোধ না হওয়ায় পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন উদ্রেকের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জনসমক্ষে এরূপ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ ছাড়া বিনা বাধায় ভিডিও ধারণ যুক্তিসংগতভাবেই অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। পুলিশের বক্তব্য থেকে জানা যায়, গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য উদ্ঘাটিত হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ যেমন নেই, তেমনই পক্ষাবলম্বনের প্রশ্নই ওঠে না। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্রহনন এবং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের আইনি সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার থেকে আমাদের বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই। নিহত সোহাগের রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং তিনি দেশের একজন নাগরিক, যিনি সন্ত্রাসের নির্মম শিকার। ফলে তার পরিবারের সঙ্গে আমরাও এই অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির অবস্থান বরাবরের মতোই স্পষ্ট-অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কুণ্ঠিত হই, যখন লক্ষ করি বিকৃত রুচির এই বিকারগ্রস্ত গোষ্ঠী তাদের অশ্লীল-কদর্য মানসিকতা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত করিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মের মূল্যবোধ ধ্বংস করছে শুধু তাদের কুৎসিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে।

ফখরুল বলেন, শত বাধা অতিক্রম করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের মালিকানা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফেরত দেওয়াই আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার। বিগত ১৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে আমাদের কষ্টার্জিত সফলতা ব্যর্থ করার সুযোগ নেই। সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের শীর্ষ নেতা যিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, যিনি দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে পরিচালিত স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের প্রধান নেতা, সাফল্যের কারিগর ও গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণপুরুষ। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ এমন বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। এই অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার প্রতি আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দায়িত্বশীল সব রাজনৈতিক দল সচেতন হবে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহিভর্‚ত এজাতীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত হলে তার দায় সংশ্লিষ্টদেরই বহন করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গভীর শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ করছি, সুপরিকল্পিতভাবে এই অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের সমার্থক রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব। গুটিকয়েক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের সঙ্গে অগ্রসৈনিক ছিল, আজ দেশের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টাই আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারবে না।

তিনি বলেন, সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পিত ফাঁদে পা না দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যে কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আমরা এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেব না। পতিত স্বৈরাচার আর কাপুরুষ ষড়যন্ত্রকারীদের মিলিত অপচেষ্টা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথে যদি কোনো বাধা হয়ে আসে, তবে সেটা আমরা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এসটি/এম