মালয়েশিয়ার মেডিসেরাম কোম্পানিতে কর্মরত একজন বাংলাদেশির ভিসা বাতিলের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আরও ৬০ জনের ভিসা বাতিলের হুমকি দিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার নেগেরি সেম্বিলানের মেডিসেরাম এসডিএন বিএইচডির ব্যবস্থাপনা নাহিদ ইব্রাহিম নামে ওই কর্মীকে ফোন করে জানায়, তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হবে এবং তাকে বহিষ্কার করা হবে।
শ্রমিকরা প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে খারাপ কাজের পরিবেশ নিয়ে কথা বলার একদিন পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন।
এর আগে ১৩ থেকে ১৬ মে মালয়েশিয়ায় উপদেষ্টার চার দিনের সফরের সময়, ১৪ মে উপদেষ্টা মেডিসেরামে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি কিভাবে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার পুনরায় চালু করতে পারে এবং শ্রমিকদের সম্মুখীন সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য তিনজন মালয়েশিয়ান মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিদেশি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে, মালয়েশিয়া গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিসেরামের এক শ্রমিক বলেন, নাহিদকে বহিষ্কারের কথা শুনে আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং প্রতিবাদ করেছিলাম। তারপর কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কাছে আমাদের ৬০ জন শ্রমিকের একটি তালিকা আছে যাদের বহিষ্কার করা হবে। এদিকে শুক্রবার প্রায় ২০০ শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব সারোয়ার আলমকে লেখা একটি ইমেলে নাহিদ লিখেছেন- কোম্পানি আমার পিছু নিয়েছে এবং আমাদের উপদেষ্টার সঙ্গে শ্রম সমস্যা নিয়ে আমি যা বলেছি তা শুনেছে। হঠাৎ করে তারা আমাকে অফিসে ডেকে বলেছে, আমাকে বহিষ্কার করা হবে।
এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনেও ইমেলটি পাঠানো হয়েছিল।
নাহিদ তিন বছরের চুক্তিতে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন এবং চলতি বছরের আগস্টে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে। স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় যেতে নাহিদ ৫ লাখ টাকারও বেশি খরচ করেছেন। কোম্পানি তাকে নিয়মিত বেতন দেয়নি বলে এখনো ঋণগ্রস্ত আছেন তিনি।
নাহিদ লিখেছেন, দয়া করে কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করুন। আমার এবং আমার পরিবারের পাশে থাকুন। নাহিদ জানিয়েছেন, উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারী বা হাইকমিশন কেউ তার ইমেলের জবাব দেননি।
১৪ মে অধ্যাপক আসিফের কাছে জমা দেওয়া এক চিঠি অনুসারে, বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় চাকরির জন্য গ্রিনল্যান্ড নামক একটি নিয়োগকারী সংস্থাকে ৫,০০,০০০ থেকে ৬,০০,০০০ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্লাইটের আগে তারা আমাদের ক্যামেরার সামনে বলতে বাধ্য করেছিল যে আমরা মাত্র ৭৮,০০০ টাকা দিয়েছি।
চিঠিতে লেখা আছে- গত দুই বছর ধরে মজুরি অনিয়মিত। কিছু মাসে কোম্পানি বেতনের মাত্র অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ দেয়। আমাদের পরিবার এখন গভীর আর্থিক সংকটে রয়েছে। আমাদের ঋণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিছু মাসে এখানে খাবার জোগানের জন্য আমাদের বাংলাদেশ থেকে আরও টাকা ধার করতে হয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে, তারা গত বছরের শেষের দিকে শ্রম আদালতে এবং পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছিল, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
এরপর তারা একজন অভিবাসী অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি মেডিসিরামের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং তারপর তৃতীয় পক্ষের দ্বারা শ্রম সমস্যাগুলো নিরীক্ষা করান।
একপর্যায়ে মেডিসিরাম নিয়মিত মজুরি প্রদান এবং নিয়োগ ফি হিসাবে ব্যয় করা মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত ২২,৫০০ পরিশোধ করতে সম্মত হন। তারা অগ্রিম হিসাবে ১,০০০ রিঙ্গিতও প্রদান করে, আশ্বাস দেন, আরও ৮৭৫ রিঙ্গিত ৩১ মে প্রদান করা হবে এবং বাকি পরিমাণ ১২ মাসের মধ্যে প্রদান করা হবে।
কিন্তু এ অর্থ প্রদান পরিকল্পনাটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন এবং আমাদের পরিবারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে কর্মীরা চিঠিতে বলেছেন। তারা কোম্পানিকে একক কিস্তিতে সম্পূর্ণ নিয়োগ ফি প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছেন।
এর আগে মেডিসিরাম কোনো নোটিশ ছাড়াই ৩৫ জন কর্মীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছিল। বর্তমানে ১৭০ জনের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করা হয়নি। কেউ কেউ এক বছর ধরে ভিসা ছাড়াই আছেন, অন্যরা দুই বছর ধরে। কয়েক মাস আগে, বৈধ ভিসা না থাকার কারণে চারজন শ্রমিককে আটক করা হয়েছিল, কিন্তু কোম্পানি কোনো দায়িত্ব নেয়নি বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
আমরা আগামী মাসের মধ্যে আমাদের ভিসা নবায়নের জন্য অনুরোধ করছি এবং এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাদের আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
এর আগে অধ্যাপক আসিফ নজরুল মেডিসিরাম কোম্পানি প্রাঙ্গণে অভিবাসীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধান করা হবে এবং এমন কিছু করবেন না যা তাদের বা কোম্পানির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তিনি ই-মেইল এবং ফোন নাম্বারও প্রদান করেছিলেন; যাতে অভিবাসীরা সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ এবং তার পিএস সারোয়ারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেডিসিরামের অফিস ফোনে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এসটি/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :