সর্বশেষ :

জরুরী নাম্বার সমূহ :

ব্রেকিং নিউজ :

শতবর্ষী পথ দখল করে মৎস্যজীবীলীগ সভাপতির পাকাঘর নির্মাণ


Songbad Times প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২, ২০২৫, ৫:৪৬ অপরাহ্ন /
শতবর্ষী পথ দখল করে মৎস্যজীবীলীগ সভাপতির পাকাঘর নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদকভোলার চরফ্যাশন পৌরসভার শতবর্ষী চলাচলের পথ দখল করে পাকা বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মৎস্যজীবীলীগের সাবেক সভাপতি শফিউল্লাহ পালোয়ানের বিরুদ্ধে। এতে ৩৫টি ভূমিহীন পরিবার দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে মারাত্মক ভোগান্তিতে রয়েছেন। তৎকালীন আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে এমন অনিয়ম করেছেন মৎস্যলীগের সাবেক এই সভাপতি।

* সতেরো বছর ধরে বিপাকে ভূমিহীন ৩৫ পরিবার
* উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষর

রোববার (২ নভেম্বর) ভুক্তভোগীরা চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর গণস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে।

স্থানীয়রা জানান, চরফ্যাশন উপজেলার পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি পুকুরপাড়ে শতবছর ধরে ভূমিহীন পরিবারগুলোর বসবাস করে আসছেন। পুকুর পাড়ের চারপাশে ভূমিহীন পরিবার বাদে পালোয়ান বাড়ীর অন্যান্য পরিবারগুলোও বসবাস করেন। পুকুরপাড়ের ৩৫টি পরিবারসহ বাড়ির বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র এই পথটি আওয়ামীলীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে বসত ঘর নির্মাণ করেছেন। এতে পথটি সংকুচিত হয়ে গেছে।

ভূমিহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ, শত বছর আগে তাদের যাতায়াতের জন্য ৬ ফুট চওড়া এই পথটি রাখা হয়। এখান দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। তাদের বাড়ীর কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স বাড়ীতে এসে রোগী নিয়ে যেত। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী অনায়াসে প্রবেশ করতো। কিন্তু মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সফিউল্লাহ পালোয়ান আওয়ালীগের ক্ষমতা খাটিয়ে চলাচলের পথটি দখল করে সে এবং তার ছেলে পথজুড়ে পাকা বসতঘর নির্মাণ করেন। এতে ৬ফুট চওড়া পথটি আজকে দেড় ফুটে পরিণত হয়েছে। বসত ঘর নির্মাণের সময় ভূমিহীনরাসহ বাড়ীর অন্যান্য পরিবারগুলো সে সময়ে প্রতিবাদ করলেও বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বাড়ির প্রায় ৩৫টি পরিবারের জন্য সরকারি বরাদ্দের টিউবওয়েলটি সে ক্ষমতা খাটিয়ে নিজস্ব আয়ত্তে রেখে ব্যবহার করছেন তার সৌদিপ্রবাসী ছেলের পরিবার ও তিনি। এতে অন্যান্য পরিবারগুলোর টিউবওয়েলটি ব্যবহারের থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, একইসাথে প্রভাব খাটিয়ে পালোয়ান বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দিন এর চার শতাংশ, আবদুল মুনাফ এর এক শতাংশ, মমতাজ বেগম এর দুই শতাংশ, হাবুল্লা মাঝির দুই শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জমি দখল ছাড়াও শতাধিক অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এছাড়াও মৎস্যলীগের সভাপতি থাকাকালীন জেলেদের নামের সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে তিনি নামে-বেনামে তালিকা করে সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ ভোগ করতেন। এতে প্রকৃত জেলেরা খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দীর্ঘদিনের এমন অনিয়মে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকিতে গলদ থাকায় তিনি পার পেয়ে যান।

ভুক্তভোগী মালেক পালোয়ান বলেন, ‘বর্তমানে বাড়িতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়ায় দৈনন্দিন কাজ কর্মের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কোন প্রকার দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে, কেউ অসুস্থ হলে কোন প্রকার অ্যাম্বুল্যান্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অথবা কোন চিকিৎসক, উদ্ধারকর্মী যাতায়াত করতে পারবেন না। একজন মানুষ মারা গেলে তার লাশ নেয়ার পথটিও নেই। এমনকি কোন বৃদ্ধ ব্যক্তি মসজিদে যেতে পাঁচ মিনিটের পথ আধাঘন্টা ঘুরে যেতে হয়। তাও অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে।’

একই বাড়ীর শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা বলেন, ‘পথটি এতোটাই ছোট হয়েছে যে, যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ বা কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাকে বের করে আনারও কোনো পথ নেই।’

শতবর্ষী চলাচলের পথ দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত শফিউল্লাহ পালোয়ান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সম্পত্তির মধ্যে আমি ঘর নির্মাণ করেছি।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, গণসাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উক্ত বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চরফ্যাশন পৌরসভার প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এসটি/এম